বৃহস্পতিবার, ডিসেম্বর ১৩, ২০১৮

এলোমেলো-২

শুভঙ্কর,
ওই যে তোমাকে এক মেয়ের কথা বলেছিলেম না!
তাকে আমি চিঠি দিয়েছিলেম, মনে পড়ছে?
চিঠিতে তার ভরা যৌবনের কথা লিখেছিলেম তাকে,
তিনি এক ফোটাও রাগ করেন নি। শুধু হেসেছিলেন।
প্রতিউত্তরে অনধিকার চর্চার একচুমু চেয়েছিলেম,
তিনি বলেছিলেন যেন সময় করে নিয়ে যাই, যদি একা পাই!
মনে পড়ছে শুভঙ্কর?
হ্যা, ওই মেয়েটাই শুভঙ্কর! ওই মেয়েটাই।

সেদিনের সেই এলোমেলো মেয়েটি আজ বড্ড বেশি গোছানো গো, শুভঙ্কর!
সেই মেয়েটা আজ প্রচন্ড বড় হয়েছে গো, বুঝতে শিখেছে প্রচুর।
তিনি এখন অনধিকার চর্চার প্রশ্রয় দেন না একদম।

তিনি এখন বদলে গেছেন শুভঙ্কর,
প্রচন্ড বদলে গেছেন,
যে বদলে যাওয়াতে নষ্টদের ঠাঁই নেই, একদমই নেই।
আমি অনধিকার চর্চার অধিকারের কথা তুলতেই তিনি মুখ ফিরিয়ে নিলেন।
হেটে চলে গেলেন দূর-বহুদূর। দিগন্তের ওপার।

শুভঙ্কর!
আমার মতো তুমিও নষ্ট, জানো তো?
আমরা বদলাইনি, ওরা বদলেছে, প্রচুর বদলেছে।
অনধিকার চর্চা ভুলে যাও, আবেগ ভুলে যাও,
কবিতা ভুলে যাও, গল্প ভুলে যাও, উপন্যাস ভুলে যাও,
লিখতে ভুলে যাও, গাইতে ভুলে যাও, আবৃত্তি ভুলে যাও।

ফের কোনদিন নষ্ট থেকে নব্য সৃষ্টির সৃষ্টি হবে না।

-আ.ব.স. রাজ।
রাত ১০টা ৪৩ মিনিট।
বুধবার | ১২ ডিসেম্বর, ২০১৮।

মঙ্গলবার, ডিসেম্বর ১১, ২০১৮

নারী-২

আমি এক নারীকে খুঁজছি।
যে নারীর নয়নের কৃষ্ণগভীরের;
প্রলয়ঙ্করী ক্ষমতা নিনা-র অধিক লক্ষ-কোটি।
যার এলো কেশের অবাধ্যতা ইরমা কে হার মানায়।

পূর্ণ হাসির ফলে ওই উত্তল চেহারায় মধ্যিখানে;
সৃষ্টিহয় গোটা দুই মারিয়ানা ট্রেঞ্চ।
মহাশূন্যের নীরবতা তার গম্ভীরতায় হার মেনে যায়।
যার ন্যাভালের গভীরতায় সুপ্ত;
কয়েক কোটি মিস্ট্রিয়াস মিল্কিওয়ে।

আমি সেই নারীকেই খুঁজছি,
যার ভালোবাসায় তামু ম্যাসিফ নিমিষেই জল হয়ে যায়।
রাতের আঁধারে যে নারীর দুঃখে সমস্ত পৃথিবীতে;
নেমে আসে নিশ্বাব্দিক কনভিকশনাল রেইনফল।

হে বিশ্বব্রহ্মাণ্ড,
দেবে আমায় তার সন্ধান?
আর কতো কোটি মিলেনিয়া লুকিয়ে রাখবে?
রাখবে আমায় কৃষ্ণগহ্বর জ্ঞানে?

আমি জেনে গিয়েছি, তিনি আছেন।
তিনি আছেন; প্রকৃতি মায়ার অন্তরে।

-আ.ব.স. রাজ।
রাত ১১টা ১৫মিনিট
বুধবার | ২৮ নভেম্বর, ২০১৮।

সোমবার, নভেম্বর ২৬, ২০১৮

কারাদন্ড শ'বছর



কালো কুর্তাধারী বাবু শুধাইলেন,
প্রমাণ কি?

আমি বলিলাম,
আজ্ঞে, প্রমাণ তো নাই হুজুর!
তবে জানি আমি নাম তাহার।
আনিয়া তাহাকে এই দরবারে,
জেরা করিলেই প্রমাণ হইবে, হুজুর।



নাম যে মিথ্যা নয়, তাহার প্রমাণ কি?
একই নামে কত মানুষ হইয়া থাকে! জানা আছে বৈকি?
যাচাই করিয়াছিলে, নাম মিথ্যা নাকি সত্যি?
দেখিয়াছিলে নাম সার্টিফিকেট;
জন্ম নিবন্ধন কিংবা টিকা কার্ডে?
সাধে কি কহে! মূর্খ জাতে?

আজ্ঞে, মাফ করিবেন হুজুর,
আমি মূর্খ, জ্ঞানহীন, ক্ষমা চাহিতেছি প্রভুর।
তবে তাহার কিছু আলোকচিত্র রহিয়াছে আমার নিকটে।
যদি অভয় আর অনুমতি দেন, পেশ করি দরবারে?

আলোকচিত্র কি তুমি নিজহস্তে তুলিয়াছো?

আজ্ঞে মাফ করিবেন হুজুর,
তাহার সরাসরি সাক্ষাতলাভ করিতে পারিনাই।
সেই সৌভাগ্যে আমার কুলায় নাই।
সোশ্যাল মিডিয়া নামক পোষ্ট অফিসে,
তিনি ওই আলোকচিত্র;
পাঠাইয়াছিলেন আমার নিকটে।

হইতে পারে না প্রাপক ভুল ছিলো?
হইতে পারে না বেনামি পত্র ছিলো?
যত্তসব মূর্খ যত্রতত্র!
আফিম এখন কতো কিলো?
দরদাম ঠিকঠাক জানা আছে তো?

মাফ করিবেন, ক্ষমা চাহিতেছি প্রভুর।
নেশা-ভাঙ ছাড়িয়া দিয়াছি,
সপ্তাহে ছ'দিন আসর জমে, আখড়া অন্তর।
সবই তো হইলো, আজ্ঞে হুজুর!
সবই কহিলাম!
সর্বশেষ বাঁচিয়া রহিয়াছে প্রমাণ, তার কন্ঠ সুমধুর।
যদি অনুমতি দেন, শুনুক দরবার?

অনুমতি দেওয়া হইলো!

[ক্যাসেট বাজিতে আরম্ভ করিলো,
সমস্ত দরবার মন্ত্রমুগ্ধ হইয়া শ্রবণ করিতে লাগিলো।
অতঃপর ক্যাসেটের অন্ত ঘটিলো।
সমস্ত দরবার কন্ঠের প্রশংসায় ভাসিলো]

বাহ বা! মারহাবা! আহা!
কি কন্ঠ! পরাণ জুড়ানো! শ্রুতিমধুর।
এই নারী এমন করিতে পারে!
অসম্ভব! অমঙ্গল হইবে এমন কল্পদাতার!
বাহির হও, খালি করো দরবার!
যদি এক মুহূর্ত ও দাঁড়াইয়া থাকো-
শাস্তি হইবে! কারাদন্ড শ'বছর।


- আ.ব.স. রাজ।
ভোর ০৬টা ৩৬ মিনিট।
সোমবার | ২৬ নভেম্বর, ২০১৮।  

শনিবার, নভেম্বর ০৩, ২০১৮

মধ্যদুপুর

তুমি গভীর রাতের শেষে প্রথম সূর্যোদয় ছিলে আমার।
তারপর হারিয়ে গেলে।
এখন আমার সূর্যোদয় হয় না,
এখন আমি সকাল দেখি না।
তোমার কি এখন মধ্যদুপুর?
চকচকে রোদ্দুর আলো চারিদিক?

- আ.ব.স. রাজ
#_পথ_হারা_পথিক_


শুক্রবার, নভেম্বর ০২, ২০১৮

ক্ষণিকা

সহস্র কোটি শতাব্দী পেরিয়েছে,
চায়ের দোকানটার আলো মলিন হয়েছে দিনকে দিন।
ইলেক্ট্রিসিটির কানেকশন এর জন্য বাতির নিচে তৈরী ঢাকনাটা ক্লান্ত হয়ে খুলে পড়েছে। ঠিক হবে হবে বলে আর ঠিক হয়নি ওটা।
সময় হয়ে ওঠেনি যে!
সময় হবে কি করে?
দেয়াল ঘড়িটা সময় গুনতে গুনতে, সেকেন্ডের কাটা টিকটিক করতে করতে;
দম ফুরিয়ে এসেছে ওর। ওর নিরাপত্তার কাচটা ভেঙ্গেচুরে একাকার।
ধুলোবালি আর মাকড়শার জালের কারখানা এখন ঘড়িটা।
দেয়ালের রঙে কলঙ্ক লেগেছে,
ওতে লেগেছে সহস্রকোটি বিজ্ঞাপনের পোষ্টার,
লেগেছে, ছিড়েছে, উঠেছে।

সহস্র কোটি শতাব্দী পেরিয়েছে,
ঠিক ঠাহর করতে পারিনা কতটা সময়।
আমি একের পর এক কড়া লিকারের চা গিলেছি;
বাতাসে মিশিয়েছি সিগারেটের ধোয়া।
ভেবেছি, ভাবছি; তোমার কথা,
বলেছিলে, তুমি আসবে।
অপেক্ষার প্রহরে সমস্তসব ক্লান্ত;
তবু তুমি আসো নি....

-আ.ব.স. রাজ
#_পথ_হারা_পথিক_

অযোগ্য

কবিদের ভালোবাসা হতে চায় না কেউ,
তারা চায় কবিদের কবিত্ব হতে;
কবির কবিতা হতে।
কবিরা ভালোবাসতে জানে না বোধহয়,
কবিরা শরীরের বাঁকে বাঁকে কাব্য বুনতে জানে।
তারা আসে, প্রেম প্রেম খেলা খেলে।
কবিতার জন্ম হয়।
তারপর তারা চলে যায়।

তারা কবিতা চায়,
তারা কবিকে চায় না।
তারা কাব্য ভালোবাসে;
কবিকে ভালোবাসে না।

- আ.ব.স. রাজ।
রাত ০৮: ৪১
২৩-১০-২০১৮

বুধবার, অক্টোবর ৩১, ২০১৮

প্রিয়তার ছোঁয়া

তারপর কি হলো?

তারপর!
ঝুম বৃষ্টি নামলো, চারিদিকে প্রচন্ড জীবন্ত সবুজ!
ভেজা, মনে হচ্ছিলো সৃষ্টিকর্তা নিজ হাতে আঁকছেন এক এক করে সমস্তকিছু।
প্রচন্ড বাতাস।
তিনি ও আমি বসে আছি, পাশাপাশি।
বাতাসে ভেসে আসা বৃষ্টিবিন্দু আছড়ে পড়ছিলো আমার আর তার গায়ে-মুখে।
তার চুলগুলো উড়ে এসে আমার মুখে আছড়ে পড়ছিলো কিঞ্চিৎ পরপর।
অবাধ্য চুলকে বাধ্য না করে তিনি শুধু আমার পানে চেয়ে মুচকি হেসেছিলেন। হঠাৎ বিজলির প্রচন্ড আওয়াজ, চোখ বুজে গেলো তার!

তারপর কি হলো গো?
তারপর!
আমি ওইদিন প্রথম প্রিয় মানুষটার চুলে মুখ গুঁজেছিলাম।

-আ.ব.স. রাজ।
#_পথ_হারা_পথিক_

সোমবার, অক্টোবর ২৯, ২০১৮

খোঁজ

-তারপর কি হলো? কবি?

তারপর!
হঠাৎ একদিন তিনি হারিয়ে গেলেন!

-সে কি! হারিয়ে গেলো! কেনো গো?

কেনো হারিয়ে গেলেন তা তো জানা হয়নি কখনো।
তবে রাজপথের মোড়ে মোড়ে আর ফুটপাতে আর জেব্রাক্রসিং এর জনভীরে তাকে খুঁজে বেড়িয়েছি,
হন্যে হয়ে ঘুরে বেড়িয়েছি এখান থেকে ওখানে।

-ওমা! এত খুঁজলে! পেলে?

না গো, পাই নি। আবারো খুঁজেছি,
খুঁজেছি আর খুঁজেছি;
বাস্তবে আর ভার্চুয়ালে।
পড়ে রয়েছি কেরু আর গাঁজার নেশায় বুদ হয়ে।
ভালোবেসেছি একলা ঘরের কোনে।
ডুব মেরেছি স্রষ্টাতত্ত্বের অন্তরালে।

-বাব্বাহ! তুমি পারোও বটে। তারপর কি হলো গো কবি?

কোন কিছুতেই পাইনি তাকে।
লুকোচুরি খেলায় তিনিই জিতে গেলেন।
খুব বেশি রকম করেই জিতে গেলেন।
আমি তো বরাবরই হারু; হারার দলে।
আমার থেকে তিনিই যে সৃষ্টিকর্তার বেশি প্রিয় তা আর বলার অপেক্ষা রাখে নি; তা কি রাখে?
স্রষ্টা তাকে এমন ভাবে লুকিয়েছেন যে তাকে খুঁজে পাওয়া আমার সাধ্যের অতীতে।

-তারপর কি হলো গো কবি? শান্ত হলে? ক্ষান্তি দিলে?

না গো, পারিনি, হাল ছাড়িনি।
এখনো খুঁজে বেড়াই,
ডুব মারি স্রষ্টার সৃষ্টির অন্তরালে।
যদি একদিন পেয়ে যাই! এই ভেবে।

- কবি? খুঁজেছো? ভালোবেসেছো?

এতদিন ভালোবেসেছি বলে খুঁজে বেড়িয়েছি,
এখন খুঁজে বেড়াই তাকে খুঁজে পাওয়ার জন্যে।
'তিনি কে?' জানার জন্যে।
এখন যে ভালোবাসি একেলা ঘরের কোনে।

-ধরো পেয়ে গেলে, কি করবে গো কবি? কথা হবে? নাকি কাঁদবে? নীরবে মাথা নিচু রবে?

যদি পেয়ে যাই, যদি জেনে যাই,
তবে নিশ্চুপে নয়নজলে বলে দেবো;
"ভালো থাকুক ভালোবাসা,
ভালো থাকুক ভালোবাসার সব মানুষগুলো।"

-আ.ব.স. রাজ।
#_পথ_হারা_পথিক_

এপিটাফ

আজ ক্লান্ত আমি ধারাবাহিক মৃত্যুসংবাদে,
শরীর, মনে কাঁপুনি ধরেছে।
আজকের রাতটাই আমার শেষ রাত; বোধহচ্ছে।
কোন অজানার সব ভয় একে একে ভিড়ছে।

হৃদযন্ত্রের কাঁপুনিটা প্রতিনিয়ত বাড়ছে,
হাত-পা অসাড় হয়ে আসছে।
আচ্ছা, আমার সামাধিটা কেমন হবে?
কোথায় হবে?
কেমন হবে আমার এপিটাফটা দেখতে?
কি লেখা হবে ওতে?

তারপর,
একযুগ পেরিয়ে গেলো।
নির্জীব, নিস্তব্ধ, জীবদ্দশার শেষের স্থান, এই গোরস্থান।
আমার সমাধির আশেপাশে আরো অনেকে এসে শুয়েছে।
মাঝে মধ্যে কেউ কেউ আসে, নীরব কান্নার শব্দ ভাসে।
গুটি গুটি পায়ে ফের চলে যায়, পিছু না ফিরে।

ও হে পথিকবর,
দাঁড়াও খানিকক্ষণ,
কোন একসময় আমিও তোমার মত জীবন্ত ছিলাম।
মানুষের মুখোশধারী অমানুষ ছিলাম।
শেষ সময়টা পার করেছি, মানুষ হবার চেষ্টা করেছি।
আজ তো আমার সময় শেষ।
তুমি কি হয়েছো মানুষ?
নাকি যখন শেষ নিশ্বাস ত্যাগ করবে, থাকবে অমানুষ?

- আ.ব.স. রাজ
#_পথ_হারা_পথিক_
#মায়াবতী #mayaabotii