শনিবার, ডিসেম্বর ০৬, ২০১৪

হিমুর সন্ধ্যাপরী

অনেক দিন পর আজ হঠাৎ করেই এক অসহন মাথা যন্ত্রণা নিয়েই ঘুম ভেঙে গেলো,,
ভাঙা জানালার ফাক থেকে আকাশ টা দেখা যাচ্ছে,,
মেঘলা আকাশ,,
ঠিক রূপা মুখ ভার করে থাকলে যেমন লাগে,,
এ কি....?
আমি ঘুম ভাঙতে না ভাঙতেই রূপার কথা ভাবতে শুরু করে দিয়েছি !
নাহ, এখন ওর কথা ভাবলে চলবে না,
কাজেই রূপার সুইচটা ব্রেইন থেকে একচাপ দিয়ে অফ করে দিলাম ।
মাথা ব্যথাটা নিয়ে একটু ভাবি, দেখা যাক কি হয়।
আচ্ছা, হিরোসীমা-নাগাসাকি তে যে বোমা পরেছিলো হয়তো যেই মাপের বিশাল গর্জন মাথার মধ্যে, তবুও কেন বিরক্তিকর ভাবটা আসছে না...!!
আকাশের মেঘ মাখা মুখবদন টা দেখে...?
আচ্ছা, এটা দেখে তো আনন্দিত হবার কিছু আছে বলে মনে হয় না,
কারন আজ আকাশের মন খারাপ,,
হয়তো কিছুক্ষণের মধ্যেই কান্না শুরু করে দিবে,
ঠিক যেমন কোন হত দরিদ্র বাবা টাকার অভাবে তার ছেলেকে খেলনা কিনে দিতে না পারলে ছেলেটি যেভাবে কাঁদবে।
নাকি বিরক্তিকর ভাবটা বাবার জন্যেই আসছে না,
বাবার সেই মহাপুরুষ তৈরীর চেষ্টা !
বাবার সেই লিখে রেখে যাওয়া বাণী....
" হে বৎস, তুমি মনে রাখিও যে তুমিই সেই একমাত্র মহাপুরুষ,  যে পৃথিবীতে জন্মানোর পরেই ধীরে ধীরে মহাপুরুষ হতে শিখেছে,
আরও মনে রাখিও যে মহাপুরুষদেরকে বিরক্তি নামক বস্তুটা আঘাত হানতে অক্ষম হইয়া থাকে, তাহারা হইয়া থাকেন অটুট ধৈর্যের হিমালয়,,
আর হ্যা, তুমি তাহাদেরই একজন........"
আজ দুপুরে ইলিশ ভাজা খাওয়া হবে বলে মনে হচ্ছে,
তাই দেরী না করে বাথরুমের দিকে রওয়ানা হলাম।  কপাল আমার সাথেই আছে, কোথাও খুলে ফেলে আসি নি।  কারন বাথরুমটা ফ্যালফ্যাল করে যেন আমার জন্যেই অপেক্ষা করছিলো।
রুমে এসে বালিশের নিচে হাতদিয়ে দশটাকা পাবার কিঞ্চিৎ আশা করছিলাম, মজিদ ভাইয়ের দোকানে সকালের চা খেয়ে নাস্তা টা সারবো বলে,,
হিমু ভাই, হিমু ভাই,,
মেসের ম্যানেজার জামিল ভাই এসেছেন, সঙ্গে করে তার দরজায় টোকা মারার অসাধারন প্রতিভাটাও ফুটিয়ে তুলছেন,,
কথা বলতে ইচ্ছে হচ্ছে না,
ইস, জামিল ভাইকে যদি তার বাবা মহা পুরুষ বানানোর প্রশিক্ষণ দিতেন তাহলে হয়তো আমাকে দরজা পর্যন্ত গিয়ে দরজা কহউললে কথা বলতে হতো না,,
পৃথিবীতে তো কত কিছুই নতুন নতুন বস্তু জন্ম নিচ্ছে,
তেমন ভাবে মনে মনে কথা বলার কিছু আবিষ্কার হলো না কেন?
আচ্ছা, এটা আবিষ্কার হলে কি খুব খারাপ কিছু ঘটতো?  যেমন সন্ত্রাসীরা গোপনে তাদের সব কাজকর্ম চালিয়ে নিতো ।
আরে, ভালো জিনিস গুলো তো কম হত না,
বাচ্চারা ক্লাসের মধ্যেই তাদের খেলা পেতে দিতো !
ক্লাসের ছেলে গুলো স্কুল পালানোর প্লান করতে পারতো !
প্রেমিক প্রেমিকারা কাউকে না জানিয়েই তাদের প্রেম আলাপ সারতে পারতো !
হিমু ভাই, ও হিমু ভাই,,
এগিয়ে গেলাম দরজার দিকে, মোটামুটি রকমের পরিপাটি হয়ে আছি, তবে ছোট বাচ্চাদেরকে স্কুলে পাঠানোর আগে যেভাবে রেডি করে দেয়া হয় তার একশ হাতের মধ্যেও পৌছব না,,
দরজা খুলতেই জামিল ভাই প্রাণ খুলে হাসি দিলেন, অত্যধিক ভালো মানুষ, বাবা বলেছিলেন হাসি দেখে মানুষ চেনার কথা,
একে বারেই সহজ সরল এই মানুষটি ।
: একটু জোরে হাসুনতো ভাই।
: কেন ভাই !
: দেখবো আর শুনবো,
: ভাই, রসিকতা বন্ধ করেন তো !
: আচ্ছা করলাম ।
: হিমু ভাই, কথা আছে,
: বলেন জামিল ভাই,
: আজ দিনটাতে মেসের সবাই একটু আনন্দ করতে চাচ্ছে, তাই আজকের দিনটাতে একটু স্পেশাল খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে, খিচুরি আর ইলিশ মাছ ভাজা, এমন আবহাওয়ায় দারুন জমবে ।
: হ্যা, জমবে অবশ্যই,
: ভাই, আপনার ভাগের টাকাটা কিন্তু আমি দিবো, না করবেন না ভাই,,
: আচ্ছা জামিল ভাই, ঠিক আছে, আজ দুপুরে আমার সঙ্গে আমার এক গেস্ট খাবেন, ওনার ব্যবস্থা টা ও করবেন কিন্তু ভাই ।
: আচ্ছা ভাই, চিন্তা কইরেন না, আমি সব ম্যানেজ কইরা নিবো, আসি ভাই।
: আচ্ছা ।
জামিল ভাই হেটে চলে যাচ্ছেন । আমি জানি যে উনি আবার ফিরে আসবেন ।  কারন উনি প্রতিবারই কিছু না কিছু বলতে ভুলে যান ।  তাই দরজা খোলাই রেখে দিয়েছি ।
: হিমু ভাই,
: আসেন জামিল ভাই, বলেন, কি বলতে ভুলে গিয়েছিলেন ?
: ভাই আর লজ্জা দিয়েন না তো । বয়স হইছে তো কিছু মনে থাকে না।
: আচ্ছা ভাই দিবো না ।
: ভাই, আপনারে আমার শালীর কথা বলছিলাম না?  মনে আছে ?
: হুম ।
: আমি জানি আপনার মনে নাই।
: হুম।
: মনে থাকতে হবে না, আপনারে একদিন আমি নিয়া যাবো ওদের বাসায়, ওর হাতটা একটু দেইখা দিবেন ভাই,
: আচ্ছা, দিবো.......
রাস্তায় বের হয়ে এসেছি,
রাস্তা গুলো কেমন যেন নীরব আগের ব্যস্ততার থেকে !
আকাশে মেঘ জমে আছে, তাই রাস্তাটা নিজেকে রাগি প্রমান করার জন্য উত্তপ্ত হতে পারছে না ।
টাকা নেই বলে সকালের নাস্তা টা খাওয়া হলো না, মজিদ ভাই অবশ্য ভালো লোক, আমি গেলে না খেয়ে ফিরতে হতো না,,
আসলে এখন আর যাওয়ারই ইচ্ছে নেই,,
মহা পুরুষ তো,, তাই এই অবস্থা......
বাবা তার চিরকুটে বলেছিলে যে মহাপুরুষদের জিবন কোন বাধা ধরা নিয়মে চলে না, তাদের যখন যা ইচ্ছা তাইই করতে পারেন ।
এখন আমার একমাত্র ইচ্ছা হলো রাস্তায় খালিপায়ে অনেকক্ষন হেটে হেটে ঘুরে বেড়ানো।
পিছন থেকে আমি হঠাৎ করেই শুনতে পেলাম,
হিমু দা......!!
বাদলের কন্ঠ, আবাক হবার কিছুই নেই, ও দিনের সিংগ সে আমাকেই খুজে বেড়ায়,,
আমার ভক্তদের শীর্ষস্থানে বাদলের স্থান ।
: বল কি বলবি,, আমার হাতে আজ সময় কম,,
: কোথায় যাচ্ছো ?
: হাটবো সারাদিন,
: আমিও যাবো চল,
হাটতে হাটতে দিয়ে ধানমন্ডি লেক এ পৌছলাম,
অসংখ্য তরুণ-তরুণীদের দল হাত ধরাধরি করে বসে আছে, একে অপরকে মুগ্ধ হয়ে দেখছে, তাদের চোখেই মনে হচ্ছে পৃথিবীটা ঘুরছে, আর তারা ভদ্র ছাত্র-ছাত্রীর মত সেই ভূগোল পাঠ হা করে গিলছে.....
সেই পরিচিত জায়গায় এসে থামলাম,,
বসে পড়লাম,, গুরুকে অনুসরণ করে বাদলও ঠিক তাই করলো,, আমার ভঙ্গিতেই বসলো......
: বাদল ।
: হ্যা হিমু দা ।
: তোর পকেটে ৯৮ টাকা আছে, সেই টাকা বের করে চা নিয়ে আয় ।
: আচ্ছা হিমু দা ।
হিমুর কোন কর্মকান্ডে বাদল বিভ্রান্ত হয় না,
কারন হিমু তার গুরুর থেকেও বেশী কিছু,
যে সব কাজকর অন্য মানুষের কাছে প্রচন্ড অস্বাভাবিক মনে হয়, বাদলের কাছে তা সামান্যই.......
কারন বাদল হিমুর একন্তই আনুগত্য ভক্ত,,
যাকে হিমু কেটে ধানমন্ডির লেকে ভাসিয়ে দিলেও একটা শব্দ মুখ থেকে বের করবে না......
চা খেতে খেতে আমি বাদলকে বললাম,
: বাদল, তুই এখন বাসয় চলে যা, আমি একজনের জন্য অপেক্ষা করবো ।
: কার জন্যে হিমু দা ?
: নীলার জন্যে ।
: বলবে, সে কে ?
: জানি না সে কে, তবে জানি যে সন্ধ্যার আগে গোধূলির মুহূর্তে ও আসবে,, একটা নীল শাড়ি পড়ে, তার সাজগোজে কিছুটা এলোমেলো ভাব থাকলেও তাকে দেখতে লাগবে সন্ধ্যা পরীর মতো, মেসে বলে এসেছি, তাকে নিয়ে গিয়েই ডিনারটা শেষ করতে হবে........


অসমাপ্ত গল্প ।।।।।

লেখা :
#_পথ_হারা_পথিক_

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন